দূর্নীতির বরপুত্র ওসমানীর ব্রাদার সাদেক

নানা অপকর্মের মূলহোতা সাদেক সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় প্রশাসনও

স্টাফ রির্পোটার : সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্রাদার সাদেক নানা অপকর্মের মূলহোতা ও দূর্নীতির বরপুত্র নামে খ্যাত হয়েছে হাসপাতাল এলাকায়। ব্রাদার সাদেক চক্রের নানা অপকর্ম ও তার দাপটের কাছে অসহায় খোদ হাসপাতালের প্রশাসনও । চাকরি দেওয়া, বদলিসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেককে প্রধান আসামী করে আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নানাভাবে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে সাদেক নিজেকে প্রভাবশালী দেখিয়ে সবখানেই বিচরণ করেন। রয়েছে তার শক্তিশালী বাহিনীও। হাসপাতালের ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা পর্যন্ত ছিল তার চক্রের ব্যাপ্তি। ফলে সাদেক বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। মঙ্গলবার ঘুষের ৬ লাখ টাকাসহ সাদেকের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া সিলেট ভিউজকে জানিয়েছেন, সাদেক ও তার লোকজনের অপকর্মের খবর তাদের কাছে আসতো। কিন্তু প্রমাণের অভাবে কিছু করা যায়নি। এখন যেহেতু প্রমাণ মিলেছে তাদের বিরুদ্ধে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় রাতেই হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মেডিকেলের স্টাফ নার্স ইসরাইল আলী সাদেককে। এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া সিনিয়র স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম ও সুমন চন্দ্রদেবকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ উল্লেখ করেছেন, প্রধান আসামি সাদেকের নির্দেশনায় দীর্ঘদিন ধরে চাকরি দেয়া, বদলি করানোর কথা বলে এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি স্বীকার করেছে। ব্রাদার সাদেক অনিয়ম, দুর্নীতি, দালালি, অর্থ আত্মসাত করে অঢেল সম্পদ অর্জন করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ চলমান রয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) সুমন চন্দ্র সিলেট ভিউজকে জানিয়েছেন, মামলায় গ্রেপ্তার করা দু’আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। এদিকে গোয়েন্দা অভিযানকালে দেখা গেছে ওসমানীতে ব্রাদার সাদেকের সিন্ডিকেটে শুধু নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীরাই নয় ওখানে ডিউটিতে থাকা বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা নানাভাবে জড়িত। ঘটনার পর থেকে তারা বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালান। এছাড়া, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রলীগের নেতারাও একই চক্রের সঙ্গে জড়িত। পরে ছাত্রলীগ নেতার কাছ থেকে মুচলেকাও আদায় করা হয়েছে। সাধারণ নার্সরা জানিয়েছেন সাদেক নিজেকে মন্ত্রী গ্রæপের লোক পরিচয় দিয়ে সে দাপট দেখাতো। তার প্রভাবের কারণে সাধারণ নার্সরা ভয়ে তটস্থ থাকেন। তিনি নার্সদের নানাভাবে হয়রানিও করেন। নার্সেস এসোসিয়েশনের কেন্দ্র পর্যন্ত তার দাপট থাকার কারণে কেউ ভয়ে কোনোদিন প্রতিবাদ করেননি। গত মঙ্গলবার ওসমানীর নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি শামীমা আক্তার এ প্রতিবেদকের সথে আলাপকালে হাসপাতালের প্রশাসনের সামনে এসব কথা স্বীকার করেছেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে লিজ নেয়া ফার্মেসি ছিল সাদেকের। ওই ফার্মেসিতে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হয়েছে রোগীর স্বজনরা। বেশি দামে ঔষধ বিক্রি, রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ থাকলেও হাসপাতালের প্রশাসন ছিলেন নির্বিকার। হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় সাদেকের লোকজন চাঁদাবাজি করে। হাসপাতাল প্রশাসন বারবার ব্যক্তি মালিকানাধীন এম্বুলেন্সকে বাইরে বের করার চেষ্টা করলেও সাদেকের কারণে পারেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যতবারই উদ্যোগ নিয়েছে ততবারই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ঘেরাও সহ নানা ঘটনা ঘটানো হয়েছে। হাসপাতালের ট্রলি সিন্ডিকেট, দালাল সিন্ডিকেটও নিয়ন্ত্রণ করে সাদেক ও তার সহযোগীরা। সাদেকের লোক হলে দালালরা অবাধে ওয়ার্ড পর্যন্ত যেতে পারে। বাইরে ফার্মেসির কেউ এক্ষেত্রে সুযোগ পান না। হাসপাতালের আউট সোর্সিংয়ে লোক নিয়োগের নামে বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে সাদেক। টাকা দিয়ে নিয়োগ পাওয়ার পরও প্রতি মাসে বেতন থেকে একটি টাকা সাদেককে দিতে হতো তাদের। এ নিয়ে আগের পরিচালকের কাছে একাধিক অভিযোগ দেয়া হলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অপারেশন থিয়েটারে নানা ঘটনায় সম্পৃক্ত সাদেক ও তার লোকজন। কানাইঘাটের খসরু নামের এক রোগীর কিডনি চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর খসরু মামলা করলেও কোনো প্রতিকার পাননি। ওসমানীর ওই ভুক্তভোগী নার্স অদিতি রানী (ছদ্ম নাম) ঘটনার পর জানিয়েছিলেন, ঘুষের ৬ লাখ টাকা তার কাছ থেকে সাদেককে নিজেই এসে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু চালাক সাদেক নিজে না এসে পাঠায় তার সহকর্মী আমিনুলকে। তবে সাদেক আশপাশেই ছিল। ধরা পড়ার পর থেকে সে গা ঢাকা দিয়েছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে সাদেককে ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি টিম অভিযানে রয়েছে। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চতুর সাদেক আড়ালে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নানাভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তদন্তে থাকা কোতোয়ালি পুলিশ জানিয়েছে সাদেককে ধরতে তারা সক্রিয় রয়েছে। তাকে খুব দ্রæত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

 

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker