এক পর্যায়ে গত সোমবার রাত ১১টার পর হঠাৎ স্ত্রী ফারজানাকে একটি চেয়ারের সাথে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে তাকে নিয়ে যান ঘরের বাথরুমে। সেখানে নিয়ে তার গায়ের গেঞ্জি দিয়ে ফারজানার চোখও বেঁধে ফেলেন। শুরু করেন মারধর। এরপর ফারজানার মাথায় পানি ঢালতে থাকেন। এক পর্যায় ফারজানা বাঁচার জন্য আকুতি করলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
ভোরে ফারজানার হাত ও চোখের বাঁধ খুলে দিলেও পায়ের বাঁধ খুলে দেয়নি পাষণ্ড ওই স্বামী। মঙ্গলবার পুরো দিনই ওইভাবে পা বেঁধে রাখা হয়। এক পর্যায়ে বিকাল ৫টায় আনোয়ার ফারজানার পিতা মাহমুদ আলীকে ফোন দিয়ে ফারজানা বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেন এবং ফারাজানাকে নেয়ার জন্য বলেন।
পরে ফারজানার পিতা মাহমুদ আলী, চাচা ঠাকুর মিয়া ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে আনোয়ারের বাড়ি যান। সেখানে যাওয়ার পর ফারজানাকে তাদের হাতে তুলে দেন আনোয়ার। পরে ফারজানা নির্যাতনের বিবরণ দেন তার স্বজনদের কাছে।
ফারজানার শারীরিক অবস্থার খারপ দেখে তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে হাসপাতালের ২য় তলায় ১৭ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বুধবার দুপুরে নির্যাতনের স্বীকার ফারজানা সিলেটভিউ২৪ডটকমের কাছে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, এবার লন্ডন থেকে আসার পর তার সাথে দূরব্যবহার শুরু করেন এবং বিভিন্ন অভিযোগ তুলেন। কিন্তু তা অস্বীকার করলে তার গালে চড় মারেন। এক পর্যায়ে একটি চেয়ার এনে ফারজানার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে আনোয়ারের পড়নের গেঞ্জি দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলেন। এছাড়ও একটি বেল্ট দিয়ে পেট বাধেন বলে জানান ফারজানা।
তিনি জানান, এক পর্যায়ে বাথরুমে নিয়ে তার উপরে পানি ঢালতে থাকেন ও মারধর করেন। তখন আনোয়ার ঢাকায় নিয়ে তাকে খুন করারও হুমকি দিয়েছেন বলে জানান ফারজানা।
ফারজানা জানান, নির্যাতনের এক পর্যায়ে একটি তিন পৃষ্টার একটি স্টাম্প এনে সেটার মধ্যে স্বাক্ষর নেন এবং বলেন শবে বরাতের মাস ও মা’র কারণে তোমাকে হত্যা করিনি। না হয় আজ হত্যা করতাম।
ফারজানা আরো জানান, আনোয়ার একাধিক বিয়ে করেছেন। এক স্ত্রী লন্ডনে রয়েছে। সেই স্ত্রীর একটি সন্তানও আছে। কিন্তু বিয়ে হওয়ার আগে আমি ও আমার পরিবারকে তা জানানো হয়নি। বিয়ের পর তারা তা জানতে পেরেছেন বলে জানান ফারজানা।
এ ব্যাপারে ফারজানার স্বামী আনোয়ার আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধা পাওয়া গেছে।
তবে ফারজানাকে আনতে যাওয়া জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নিজাম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিয়ের পর থেকেই ফারজানাকে তার স্বামী নির্যাতন আরে আসছে। গত সোমবার নির্যাতন করার পর গতকাল মঙ্গলবার আমরা তাকে নিয়ে আসি এবং পরে তাকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরো জানান, ফারজানাকে আনার সময় অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের একজন ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন গণ্যমান্য মুরব্বিও উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় এক লন্ডনপ্রবাসী স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে সারা রাত পেটালেন পাষণ্ড লন্ডন প্রবাসী স্বামী। নির্যাতনের স্বীকার ওই স্ত্রী বর্তমানে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনাটি ঘটেছে বিশ্বনাথ উপজেলার পধনাপুর গ্রামে।