মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মাহমুদ উস সামাদ শাবিতে মোসলেহউদ্দিন বিরোধী সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের সমালোচনা করেন। শাবির বর্তমান অস্থিরতার জন্য দায়ীদের শনাক্তে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে তদন্তেরও দাবি জানান সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য।
মাহমুদ উস সামাদ বলেন, “এই ইউনিভার্সিটি স্থাপনের পর থেকে প্রত্যেক বছর, না হয় দুই বছর অন্তর অন্তর কিছু শিক্ষক এখানে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের ফলে একবার সাত মাস এই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল।”
“আমাদের এখানে মোসলেহ উদ্দিন নামে একজন ভিসি সাহেব ছিলেন। ৬-৭ বছর আগে তার কোয়ার্টারে মা, স্ত্রী ও সন্তানরা থাকা অবস্থায় কিছু সংখ্যক শিক্ষক আগুন জ্বালিয়ে দেয়। দমকলকর্মীরা যখন আসতে চেয়েছিল, তাদের আসতে দেওয়া হয়নি।”
উপাচার্যের বিরুদ্ধে ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’ ও প্রশাসন পরিচালনায় ‘অযোগ্যতার’ পাশাপাশি নিয়োগে ‘অনিয়ম’ ও আর্থিক ‘অস্বচ্ছতার’ অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে গত ১৩ এপ্রিল থেকে আন্দোলন করে আসছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’।
আন্দোলনের অংশ হিসাবে গত ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭টি প্রশাসনিক পদ ছাড়েন ৩৫ জন শিক্ষক, যাদের মধ্যে অধ্যাপক জাফর ইকবালও ছিলেন।
তবে আমিনুল হক ভূইয়া ২৩ এপ্রিল জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠক ডেকে দুই মাসের ছুটিতে গেলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাসের অধীনে সেই ৩৫ জন কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
সোমবার ছুটি শেষ হওয়ার আগে হঠাৎ নিজের কার্যালয়ে ফিরে উপাচার্য নতুন প্রক্টরিয়াল কমিটির অনুমোদন দিলে প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তাকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
সিলেটের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য মাহমুদ বলেন, “দুই মাস আগে ভিসি স্যারের সঙ্গে সামান্য একটা গণ্ডগোল নিয়ে এই ইউনিভার্সিটির ৩০ জন শিক্ষক তাৎক্ষণিক রিজাইন করেন। স্ত্রীর ডেলিভারির বিষয় থাকায় উনি দুই মাসের ছুটি নিয়েছিলেন। গতকাল উনি যখন জয়েন করেন, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ওনাকে অবরুদ্ধ রাখা হয় বিকাল ৪টা পর্যন্ত।”
“অনেক চেষ্টা করেও তাকে মুক্ত করা সম্ভব হয় নাই। আজকেও তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন।”
গত মে মাসে অনুষ্ঠানে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ সামাদ চৌধুরী কয়েস শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জাফর ইকবালকে ‘সিলেট বিদ্বেষী’ আখ্যায়িত করে বিষোদগার করেন।
তিনি বলেন, তার ক্ষমতা থাকলে জাফর ইকবালকে ধরে এনে চাবুক মারতেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান জাফর ইকবালকে নিয়ে এ ধরনের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন বিশিষ্ট নাগরিকরা।
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাহমুদের ওই বক্তব্য নিয়ে উস্মা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও। বিভিন্ন স্থানে মিছিল হয়েছে লেখক ও শিক্ষক জাফর ইকবালের প্রতি বিষোদগারের প্রতিবাদে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ওই সাংসদের কুশপুতুল পোড়ানোর ঘটনাও ঘটে।
সংসদ সদস্য মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, “এই ইউনিভার্সিটি একটি মাত্র ইউনিভার্সিটি যেটি ২৫০০তম স্থান দখল করে আছে। যেটা আমরা আরও ভালো করতে পারি। এই জন্য একটা তদন্ত কমিটি করে একটা সুষ্ঠু সমাধান করবেন।